শনিবার | ১৫ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১লা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজশাহী শহরের ইতিহাস: সিল্কসিটি থেকে শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র

নিউজ ডেস্ক:

বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত রাজশাহী শহর শুধু একটি প্রশাসনিক কেন্দ্র নয়, এটি ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিক্ষা ও সংস্কৃতির এক অপূর্ব সংমিশ্রণ। একসময়ে পদ্মা নদীর কোলঘেঁষা এই শহর ছিল মূলত ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র। আজ এটি পরিচিত বাংলাদেশের “শিক্ষানগরী” ও “সিল্কসিটি” হিসেবে।

 

রাজশাহীর প্রাচীন ইতিহাস

রাজশাহীর ইতিহাস বেশ সমৃদ্ধ ও পুরাতন। ধারণা করা হয়, গুপ্ত ও পাল যুগে (৪র্থ-১২শ শতাব্দী) এই অঞ্চলে বৌদ্ধ ও হিন্দু সভ্যতার ব্যাপক প্রসার ঘটেছিল। একসময় এটি পুন্ড্রবর্ধন জনপদের অন্তর্ভুক্ত ছিল। পরবর্তীতে সেন ও মুসলিম শাসনের আমলে এই অঞ্চলের সংস্কৃতি ও অর্থনীতিতে পরিবর্তন আসে।

 

১৬শ শতকে মুঘল আমলে রাজশাহীর গুরুত্ব বাড়ে। তখনকার সময়ে এটি ব্যবসা ও কৃষির কেন্দ্র হয়ে ওঠে। বিশেষ করে পদ্মা নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বন্দরগুলো রাজশাহীর ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে ভূমিকা রাখে।

 

ব্রিটিশ আমলে রাজশাহীর বিকাশ

রাজশাহীর আধুনিক শহর হিসেবে গড়ে ওঠার শুরু হয় ১৮২৫ সালে, যখন ব্রিটিশরা এটিকে জেলা ঘোষণা করে। ব্রিটিশ আমলে এখানে ইন্ডিগো (নীল) চাষের প্রসার ঘটে, যা পরবর্তীতে ১৮৫৯-৬০ সালের নীল বিদ্রোহের জন্ম দেয়।

 

১৮৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় রাজশাহী পৌরসভা, যা শহরের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ব্রিটিশ শাসনামলেই রাজশাহী হয়ে ওঠে বাংলার দ্বিতীয় বৃহত্তম শিক্ষাকেন্দ্র। ১৮৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত রাজশাহী কলেজ থেকে বহু প্রখ্যাত ব্যক্তি শিক্ষা লাভ করেছেন।

 

পাকিস্তান আমল ও স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস

১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর রাজশাহী পূর্ব পাকিস্তানের অংশ হয়ে ওঠে। ১৯৫৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শহরটি বাংলাদেশের অন্যতম শিক্ষা নগরীতে রূপ নেয়।

 

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজশাহী ছিল এক রক্তক্ষয়ী অধ্যায়ের সাক্ষী। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনী শহরে হামলা চালায় এবং বহু নিরীহ মানুষকে হত্যা করে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাস ছিল যুদ্ধের প্রধান কেন্দ্র। ১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ রাজশাহী মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে এবং ১৬ ডিসেম্বর পুরোপুরি মুক্ত হয়।

 

আধুনিক রাজশাহী: শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সিল্কের শহর

বর্তমানে রাজশাহী বাংলাদেশের অন্যতম পরিকল্পিত ও পরিচ্ছন্ন শহর হিসেবে পরিচিত। এটি সিল্ক শিল্পের জন্য বিখ্যাত হওয়ায় “সিল্কসিটি” নামে পরিচিত। রাজশাহী সিল্ক বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেছে।

 

এছাড়া, রাজশাহীতে রয়েছে বাংলাদেশের অন্যতম সবুজায়িত ও দূষণমুক্ত পরিবেশ। শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র এই শহরে রয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ, বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর, শহীদ কামারুজ্জামান চিড়িয়াখানা ও পদ্মা নদীর পাড়।

 

উল্লেখ্য যে, ইতিহাস, শিক্ষা, ব্যবসা ও সংস্কৃতির সমৃদ্ধ মেলবন্ধন রাজশাহীকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। একসময়ের ব্যবসা কেন্দ্র আজ পরিণত হয়েছে শিক্ষানগরীতে। সুশৃঙ্খল পরিবেশ, সমৃদ্ধ ইতিহাস ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনার কারণে রাজশাহী বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে।

 

(সংক্ষেপে মূল পয়েন্ট)

✔ প্রাচীন পুন্ড্রবর্ধন জনপদের অংশ ছিল রাজশাহী।

✔ মুঘল ও ব্রিটিশ আমলে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটে।

✔ ১৮২৫ সালে ব্রিটিশ সরকার রাজশাহীকে জেলা ঘোষণা করে।

✔ ১৯৫৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়।

✔ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে শহরটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

✔ বর্তমানে এটি সিল্ক শিল্প ও শিক্ষার জন্য বিখ্যাত।

 

রাজশাহীর গৌরবময় ইতিহাস ও বর্তমান সাফল্য নিঃসন্দেহে একদিন একে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা শহরে পরিণত করবে।

রাজশাহী নিউজ টিভি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

হাইলাইটস

সাম্প্রতিক

Copyright © 2025 RajshahiNewsTV. All rights reserved. Developed by CITNBD