বুধবার | ২৫শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাজশাহীর সড়ক যেন ভাগাড়

স্টাফ রিপোর্টার: গ্রিন সিটি, ক্লিন সিটি রাজশাহী তার আসল সৌন্দর্য্য হারাচ্ছে। সড়কে আধুনিক বাতিতে আলো ঝলমলে নগরী হিসেবে দেশের সর্বমহল থেকে খ্যাতি পেয়েছিল। সাজানো-গোছানো পরিপাটি শহর পরিচ্ছন্নতা আর বিশুদ্ধ বাতাসের জন্য পদ্মার পাড়ের এ শহরের খ্যাতি দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশেও। অথচ নগরীর সড়কের পাশে ফেলা হয় আশপাশের পাড়া মহল্লার বাড়িগুলোর ময়লা-আবর্জনা। নাক চেপে পথ চলতে হয় ময়লার স্তূপ থেকে আসা দুর্গন্ধে।

সোমবার (১৬ জুন) সকালে নগরীর কোর্ট স্টেশন মোড়ের পূর্বে পাশে সড়কের পাশেই লম্বা সিরিয়ালে ময়লা আর্বজনা ফেলে রাখতে দেখা যায়। সিটি হাটের ভাগাড়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সারা দিন বাসাবাড়ি, খাবারের হোটেলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ময়লা এনে ফেলা হয় এখানে। আর এসব ময়লা পাখি, মুরগি, ছাগল আর কুকুর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দেয়। এতে উৎকট দুর্গন্ধ ছড়ায়। নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। এছাড়াও এদিন সকালে নগরীর পর্যটন হোটেলের সামনে ডাম্প স্টেশনের সম্মুখে ময়লা আর্বজনা সড়ক পর্যন্ত চলে আসতে দেখা যায়। এতে করে পথচারী ও স্থানীয়দের পড়তে হচ্ছে দূর্ভোগে। এছাড়াও সিটি হাটের পশ্চিম পাশে রাস্তায় দীর্ঘদিন থেকে আর্বজন থাকতে দেখা যায়।

এইসব অপরিচ্ছন্ন কার্যক্রমে সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে নগরবাসীকে প্রতিবাদ করতে দেখা গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (ফেসবুক) অপু নজরুল নামে এক ব্যক্তি লিখেন, “গত ১০ বছরে রাজশাহীতে এমন দৃশ্য দেখি নাই। তাও পর্যটন হোটেলের গলির মুখে, হোটেল এক্সের সামনে।” কে এম ইফতাদুল ইসলাম লিখেন, “রাজশাহী সিটি করপোরেশনকে ১০ মাসেও দেখলাম না বড় বড় ড্রেনের ময়লা কাঁদা তুলতে। বেশী বৃষ্টি হলে রাস্তায় পানি বাসায় পানি আর দূর্ঘটনা তো থাকবেই। এর জন্য দায়ী কারা হবে?” এগুলো পোস্টের কমেন্টে অনেককে ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয়ই মন্তব্য করতে দেখা গেছে।

সিটি করপোরেশন থেকে জানা যায়, প্রতিদিন নগরী থেকে প্রায় সাড়ে ৩০০ টন বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়। নগরীতে মোট ২৮টি জায়গায় বর্জ্য রাখার ঘর বা সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনের (এসটিএস) প্রয়োজন থাকলেও আছে মাত্র ১৮টি। নগরীর কোর্ট স্টেশন এলাকার বাসিন্দা কুতুব উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, আমাদের রাজশাহীর সুনাম গোটা দেশে রয়েছে। আমরা আমাদের নগরীকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন হিসেবেই দেখে আসছি। কিন্ত কয়েকমাস থেকে দেখা যাচ্ছে সড়কে ময়লা ফেলা হচ্ছে। সেগুলো আবার নিয়মতি পরিস্কার করা হচ্ছে না। সড়কটি দেখে মনে হচ্ছে ময়লা ফেলতে ফেলতে পুরো সড়কই ডাস্টবিন করে ফেলেছে।

রায়পাড়া এলাকার মোহসিন হোসেন বলেন, আমাদের রাজশাহীর যে সুনাম রয়েছে তা কি সিটি করপোরেশন নষ্ট করে ফেলবে? সড়কে ময়লার ভাগাড় তৈরি করার অনুমতি তাদের কে দিলো। প্রায় ৭ থেকে ৮ মাস একটানা প্রতিদিন এখানে ময়লা আর্বজনা ফেলা হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে তো রাজশাহীর ক্লিন সিটি তকমা আর থাকবে না। আমরা এগুলো থেকে মুক্তি চাই। সড়কে যাতে আর ময়লা না ফেলা হয় এই দাবী জানাচ্ছি।

নাগরিকদের দায়িত্ববোধ এবং সরকারি কর্মকর্তাদের মনিটরিং আরো জোরদার করতে হবে জানিয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) রাজশাহী জেলার সভাপতি সফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, রাজশাহী নগরীর যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলে রাখার ঘটনা ঘটছে। নগরীর পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ঠিকভাবে কাজ করছেন কি না, সেটা তদারকি করা প্রয়োজন। বর্তমানে যারা রাসিকের প্রশাসনিক দায়িত্বে আছেন, তাদের অবশ্যই তাদের নিজেদের কাজে মনিটরিং করতে হবে। এছাড়া প্রতিটি ওয়ার্ডে যদি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তৈরী করা হয় তাহলে তারাও এগুলো বিষয়ে কাজ করতে পারে। আসলে সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় আমাদের নগর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, “আপনি যে জায়গার নাম বললেন হোটেল এক্সের সামনে সেখানে আমাদের সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন রয়েছে। ময়লা সব সেখানে রাখা হচ্ছে। যেখানে সমস্য রয়েছে তা সমাধানে কাজ করা হচ্ছে। নগরী পরিচ্ছন্ন রাখতে আমাদের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।”

রাজশাহী নিউজ টিভি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

হাইলাইটস

সাম্প্রতিক

Copyright © 2025 RajshahiNewsTV. All rights reserved. Developed by CITNBD