স্টাফ রিপোর্টার :
বরেন্দ্র বহুমুখি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)-এর চেয়ারম্যান ড. এম আসাদুজ্জামান আর নেই। শুক্রবার (২৩ মে) সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে তিনি এ পৃথিবীর মায়া ত্যাক করে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
ড. এম আসাদুজ্জামান বিএনপির সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত ব্যারিস্টার আমিনুল হক ও সাবেক আইজিপি এনামুল হকের ভাই। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার কেল্লাবারুই পাড়ায় ১৯৪৯ সালের ১ নভেম্বর সভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করে তিনি। তাঁর মৃত্যুতে গভির সমবেদনা ও শোক বার্তা জানিয়েছেন রাজশাহী জেলা বিএনপির আহবায়ক ও বর্ষিয়ান রাজতৈনিত নেতা আবু সাইদ চাঁদ। তিনি তাঁর শোক বার্তায় জানান, আসাদুজ্জামান একজন দক্ষ, সৎ ও নিষ্ঠাবাদ প্রশাসক ছিলেন। আমরা আজ থেকে একজন সমাজ সেবক ও দক্ষ সংগঠককে হারালাম। আমি গভির ভাবে তাঁর আত্নার মাগফিরাত কামনা-সহ তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। আল্লাহপাক যেনো তাদের সকলকে ধর্য্য ধরার তৌফিক দান করেন।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মৃখপাত্র ও জরুরী বিভাগের চিকিৎসক শংকর কে বিশ্বাস জানান, ড. এম আসাদুজ্জামান নগরীর উপশহরের নিজ বাসায় ছিলেন। সকালে তিনি অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। এরপর সকল ৯টা ৪০ মিনিটে তাকে হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিয়ে আসা হয়। সেখানে পরীক্ষা-নিরিক্ষা শেষে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তিনি ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইরিগেশন ও ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট-এ স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর ১৯৮৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন। কৃষির উপর গভীর গবেষণার উদ্দেশ্যে তিনি ১৯৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে কৃষি বিজ্ঞানে পিএইচডি সম্পন্ন করেন।
ড. আসাদুজ্জামান ছিলেন একাধারে গবেষক, উদ্ভাবক ও প্রয়োগবাদী। তাঁর গবেষণার মূল ক্ষেত্র ছিল ভূগর্ভস্থ পানি, টিউবওয়েল ডিজাইন, সেচ ব্যবস্থাপনা ও খরচ পুনরুদ্ধার। তিনি উদ্ভাবন করেন ইনভার্টেড ওয়েল নামক এক বিশেষ ধরনের টিউবওয়েল প্রযুক্তি, যা অতি পাতলা অ্যাকুইফার অঞ্চলেও সফলভাবে পানি উত্তোলনে সক্ষম।তাঁর আরেকটি যুগান্তকারী উদ্যোগ ছিল প্রিপেইড মিটার ও স্মার্ট কার্ডভিত্তিক সেচ খরচ পুনরুদ্ধার ব্যবস্থা চালু করা, যা বাংলাদেশের সেচ খাতে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। এতে কৃষক স্বচ্ছ ও সাশ্রয়ী পদ্ধতিতে সেচ সুবিধা পেতে শুরু করে।
তাঁর নেতৃত্বে বরেন্দ্র অঞ্চলে বাস্তবায়িত প্রকল্পসমূহ কৃষি বিপ্লবের সূচনা করে। মরুপ্রায় বরেন্দ্র অঞ্চল আজ শস্যসমৃদ্ধ অঞ্চলে পরিণত হয়েছে, যা বরেন্দ্র মডেল নামে খ্যাত। এই মডেলটি বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলে বিস্তৃত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (ADB) তা নেপাল ও ভারতের মতো দেশেও প্রয়োগের কথা ভাবছে। তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একাধিক সম্মাননা লাভ করেন। বরেন্দ্র অঞ্চলে কৃষিজ উৎপাদন বৃদ্ধি, টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা এবং খননকৃত পুকুর ও জলাধার পুনঃউদ্ধার প্রকল্পে তিনি নেতৃত্ব দেন। তাঁর মৃত্যুতে গভির সমাবেদনা জানিয়েছেন রাজশাহী জেলা ও মহানগর বিএনপি র সকল নেতৃবৃন্দ-সহ তাঁর গ্রামবাসী।