শনিবার | ১৫ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১লা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাঘার আম নিয়ে কৃষকদের স্বপ্ন, রপ্তানির প্রস্তুতি শুরু

বাঘা প্রতিনিধি:

আমের জন্য বিখ্যাত রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় এখন মুকুলের মৌ-মৌ গন্ধে বাতাস ভরে উঠেছে। গাছের শাখায় শাখায় ফুটে উঠছে ছোট ছোট মুকুল, আবার অনেক গাছে পরিপূর্ণ মুকুলের বাহার। ফলে বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবছর আমের বাম্পার ফলনের আশা করছেন স্থানীয় কৃষি বিভাগ।

 

প্রাচীন ইতিহাসে বাঘার আমের সুখ্যাতি

বাঘার প্রবীণরা জানান, এ উপজেলায় ৫০০ বছরের পুরোনো ঐতিহাসিক বাঘা শাহী মসজিদে আমের চিত্র টেরাকোটায় খোদাই করা রয়েছে। ১৫২৩-১৫২৪ খ্রিস্টাব্দে সুলতান নুসরাত শাহ এই মসজিদ নির্মাণ করেন। এর শিলালিপিতে আমের অস্তিত্ব প্রমাণ করে, বাঘার আমের খ্যাতি যুগ যুগ ধরে বহাল রয়েছে।

 

রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের বাজার বাঘায়

রাজশাহী জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে শুধুমাত্র বাঘায় সবচেয়ে বেশি আম বাগান রয়েছে। এখানকার প্রধান অর্থকরী ফসল আম। শুধু দেশেই নয়, এখানকার আম এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। প্রতিবছর আমের মৌসুমে বাঘায় প্রায় ২৫টি ছোট-বড় আমের বাজার বসে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য— বাঘা সদর, মনিগ্রাম, বিনোদপুর, বাউসা, আড়ানী, পাকুড়িয়া ও বানেশ্বর। এসব বাজারে চারঘাটসহ আশপাশের উপজেলা থেকেও আম আসে।

 

আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে রেকর্ড পরিমাণ আম উৎপাদনের আশা

স্থানীয়রা জানান, আবহাওয়া যদি অনুকূলে থাকে এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা না থাকে, তবে এবার আম বিক্রির পরিমাণ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। এ অঞ্চলের জনপ্রিয় আমের মধ্যে রয়েছে ফজলি, খিরসাপাত, গোপালভোগ, ল্যাংড়া, আম্রপালি, আশ্বিনা, আড়াজম এবং দুষ্প্রাপ্য জাতের বৌ-ভুলানী, রানীপছন্দ, জামাইখুশি, বৃন্দাবন, মহনভোগ, কালীভোগসহ প্রায় ২০০ জাতের আম।

 

কৃষকদের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময়

প্রতি বছর মাঘ মাসের শুরুতেই গাছে মুকুল আসতে শুরু করে। বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা এখন পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। তাঁদের মতে, “আমের আনা মাছের পাই, টিকলে পরে কে কত খাই।” অর্থাৎ, গাছে যে পরিমাণ মুকুল আসে, তার মাত্র ২৫% টিকে গেলেও আমের বাম্পার ফলন হবে।

 

আমোদপুর গ্রামের সফল আমচাষি শামসুল হক জানান, মুকুল আসার পর থেকে আম পাড়া পর্যন্ত ৫ থেকে ৬ বার কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। এতে প্রতি হেক্টরে প্রায় ৩৮ থেকে ৪৫ হাজার টাকার বালাইনাশক খরচ হয়।

 

বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষে কৃষকদের পরামর্শ

বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, “বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আম চাষ করলে উৎপাদন যেমন বাড়বে, তেমনি সঠিকভাবে সংরক্ষণ, পরিবহন ও বাজারজাত করলে কৃষকরা ব্যাপকভাবে লাভবান হবেন।” তিনি আরও জানান, গত ৭-৮ বছর ধরে বাঘার আম বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে।

 

এখন শুধু দরকার অনুকূল আবহাওয়া আর সঠিক পরিচর্যা। তাহলে এবারও বাঘার আম দেশের বাজার ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক বাজারেও জনপ্রিয়তা পাবে।

রাজশাহী নিউজ টিভি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

হাইলাইটস

সাম্প্রতিক

Copyright © 2025 RajshahiNewsTV. All rights reserved. Developed by CITNBD