
নিউজ ডেস্ক: ১ ফেব্রুয়ারি বিশ্বজুড়ে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দিবস পালিত হয়—বিশ্ব হিজাব দিবস, বসন্ত ঋতুর আগমনী, এবং শের-এ-বাংলা এ কে ফজলুল হকের জন্মদিন। এই দিবসগুলোর পিছনে রয়েছে সমৃদ্ধ ইতিহাস ও ঐতিহ্য। চলুন জানি এই তিনটি দিবসের উৎপত্তি ও গুরুত্ব।
১. বিশ্ব হিজাব দিবসের ইতিহাস
উৎপত্তি: বিশ্ব হিজাব দিবস (World Hijab Day) প্রথম চালু করেন নাজমা খান, একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক। তিনি ছোটবেলা থেকে নিউইয়র্কে বসবাস করতেন এবং সেখানে হিজাব পরার কারণে বিভিন্ন বৈষম্য ও কটূক্তির শিকার হন।
এ কারণে ২০১৩ সালে তিনি এই দিবসের প্রচলন করেন, যাতে বিশ্বের বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের নারী একদিনের জন্য হলেও হিজাব পরার অভিজ্ঞতা নিতে পারেন এবং মুসলিম নারীদের প্রতি বৈষম্য কমে। প্রথম বছরেই এটি ৬৭টি দেশে পালিত হয় এবং পরে এটি ১৫০টিরও বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি ও প্রতিক্রিয়া: অনেক মুসলিম ও অমুসলিম নারী এই দিনে একাত্মতা প্রকাশ করে হিজাব পরেন।
বিভিন্ন মুসলিম ও মানবাধিকার সংগঠন এই দিবসটি সমর্থন করে।
কিছু দেশে এটি বিতর্কিত, কারণ তারা মনে করে যে এটি নারীদের জন্য চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
গুরুত্ব:
নারীদের পোশাক নির্বাচনের স্বাধীনতার পক্ষে প্রচার করা।
মুসলিম নারীদের বিরুদ্ধে বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া।
বিশ্বের বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে বোঝাপড়া ও সহমর্মিতা গড়ে তোলা।
২. বসন্ত ঋতুর আগমনী: ইতিহাস ও গুরুত্ব
উৎপত্তি ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট: বসন্ত ঋতু প্রকৃতির নবজাগরণের ঋতু। বাংলাদেশ ও ভারতের উপমহাদেশে বসন্ত ঋতুর প্রথম অনুভূতি আসে ফেব্রুয়ারির শুরুতেই, যদিও বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বসন্তের প্রথম দিন ১ ফাল্গুন (১৩ ফেব্রুয়ারি)।
প্রাচীন ভারতে ‘বসন্ত পঞ্চমী’ ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ উৎসব, যা সরস্বতী পূজার সঙ্গে যুক্ত। মোগল আমলেও বসন্ত উৎসব পালন করা হতো, বিশেষ করে হোলি উৎসবের সূচনা হিসেবে।
বাংলাদেশে বসন্ত উৎসবের শুরু: ১৯৮০-এর দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা ‘বসন্ত বরণ উৎসব’ শুরু করেন।
বর্তমানে এটি বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে খুব জনপ্রিয়।
মানুষ হলুদ ও বাসন্তী রঙের পোশাক পরে উৎসবে অংশ নেয়।
বসন্তের বৈশিষ্ট্য:
শীতের বিদায় এবং উষ্ণ আবহাওয়ার সূচনা।
প্রকৃতিতে নতুন পত্রপল্লব ও ফুলের বাহার (পলাশ, শিমুল, কৃষ্ণচূড়া ইত্যাদি)।
কোকিলের ডাক ও নানা প্রজাতির পাখির কলরব।
উৎসব ও উদযাপন:
ভারতে – বসন্ত পঞ্চমী ও সরস্বতী পূজা উদযাপিত হয়।
বাংলাদেশে – পহেলা ফাল্গুন (১৩ ফেব্রুয়ারি) ব্যাপকভাবে উদযাপিত হয়।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে – বসন্ত উৎসব পালিত হয়, যেমন চীনে ‘স্প্রিং ফেস্টিভাল’, জাপানে ‘চেরি ব্লসম ফেস্টিভাল’।
৩. শের-এ-বাংলা এ কে ফজলুল হকের জন্মদিনের ইতিহাস
জন্ম ও প্রাথমিক জীবন: আবুল কাসেম ফজলুল হক (এ কে ফজলুল হক) ১ ফেব্রুয়ারি ১৮৭৩ সালে বরিশাল জেলার রাজাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন বাংলার অন্যতম প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ, যিনি শের-এ-বাংলা (বাংলার বাঘ) উপাধি লাভ করেন।
রাজনৈতিক জীবন ও অবদান: ১৯৩৭ সালে তিনি অবিভক্ত বাংলার প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন।
১৯৪০ সালে তিনি লাহোর প্রস্তাব উত্থাপন করেন, যা পরবর্তীতে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার ভিত্তি তৈরি করে।
তিনি কৃষক ও শ্রমিকদের অধিকারের জন্য ‘কৃষক প্রজা পার্টি’ গঠন করেন।
বাংলাদেশে তাঁর অবদান: তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
বাংলার কৃষকদের জমিদারি শোষণ থেকে মুক্ত করতে ভূমি সংস্কার আইন প্রণয়ন করেন।
তিনি পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে ছিলেন।
তাঁর স্মরণে উদ্যোগ ও স্বীকৃতি: ঢাকা শহরে শের-এ-বাংলা নগর ও শের-এ-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়াম তাঁর নাম অনুসারে নামকরণ করা হয়েছে।
তাঁর স্মরণে প্রতি বছর বিভিন্ন সভা ও আলোচনা অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়।
১ ফেব্রুয়ারি ইতিহাস ও সংস্কৃতির এক গুরুত্বপূর্ণ দিন। বিশ্ব হিজাব দিবস মুসলিম নারীদের অধিকার রক্ষার আন্দোলন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, বসন্তের আগমনী নতুন জীবনের বার্তা বহন করে, এবং শের-এ-বাংলা এ কে ফজলুল হকের জন্মদিন আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় এক মহান নেতার অবদান।
এই দিনটি শুধুমাত্র তারিখের হিসেবে নয়, বরং বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব বহন করে, যা বিশ্বজুড়ে প্রভাব বিস্তার করে।